
বাংলার গ্রামীণ মেলা ও লোকজ উৎসব ┃ ছবি তুলেছেন : GMB AKASH (সংগৃহীত)
বাংলার গ্রামীণ মেলা ও লোকজ উৎসব গ্রামের জীবন, রীতিনীতি ও সংস্কৃতির এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। বাঁশের স্টল, মিষ্টির সুবাস, ঘূর্ণায়মান নাগরদোলা ও শিশুর উচ্ছ্বাস—সবই মেলাকে প্রাণবন্ত করে তোলে। প্রকৃতি, মানুষের কর্মব্যস্ততা ও স্থানীয় গান সব মিলিয়ে গড়ে তোলে বাংলার গ্রামীণ জীবনের রঙিন ক্যানভাস।
গ্রামীণ মেলাকে বলা যায় এক জীবন্ত সাংস্কৃতিক আখ্যান। এখানে পাওয়া যায় হাতে সেলাই করা নকশিকাঁথা, বাঁশের ঝুড়ি, কাঠের ঘোড়া কিংবা মাটির খেলনা—যা গ্রামীণ কারিগরের সৃজনশীলতা ও ঐতিহ্যের ধারক। লোকগান যেমন জারি, সারি, গম্ভীরা বা পালাগান আজও এই উৎসবের অপরিহার্য অংশ, যা আমাদের লোকসংস্কৃতির মূল সুরকে বহন করে।

গ্রামীণ মেলাকে বলা যায় এক জীবন্ত সাংস্কৃতিক আখ্যান ┃ ছবি: সংগৃহীত
গ্রামীণ মেলা মূলত সামাজিক বন্ধনের কেন্দ্র। এখানে গৃহিণীরা দল বেঁধে কেনাকাটা করেন, কৃষকরা আড্ডায় মেতে ওঠেন, শিশুরা ছুটে বেড়ায় এক স্টল থেকে আরেক স্টলে। আত্মীয়স্বজনের দেখা, নতুন বন্ধুত্ব কিংবা পুরনো সম্পর্কের পুনর্জাগরণ—সবই ঘটে এই একদিনের লোকজ উৎসবে।
বাংলার গ্রামীণ মেলা ও লোকজ উৎসব অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। স্থানীয় কারিগররা হস্তশিল্প বিক্রি করেন, কৃষকেরা আনেন মৌসুমি ফসল, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মেলাকে আয়ের উৎসে পরিণত করেন। ফলে এই আয়োজন হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।

এই আয়োজন হয়ে ওঠে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ┃ ছবি: সংগৃহীত
মেলার আসল কোলাহল জমে বিনোদনের মঞ্চে। নাগরদোলার ঘূর্ণিতে শিশুদের উচ্ছ্বাস, সার্কাসের বিস্ময়কর খেলা, লাঠিখেলার দাপট আর যাত্রাপালার সংলাপ—সব মিলে মানুষ ডুবে যায় লোকজ আনন্দে। কোথাও পুতুলনাচ, কোথাও হাডুডু বা ষাঁড়ের লড়াই, আবার কোথাও মোরগের লড়াই দর্শকদের মাতিয়ে তোলে।
বৈশাখী মেলা: বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে নতুনের রঙে সাজানো উৎসব।
পৌষ মেলা: শীতের সকালে খেজুর রস আর পাটালি গুড়ের স্বাদে জমে ওঠা আয়োজন।
নবান্ন মেলা: নতুন ধানের খুশবু নিয়ে কৃষক-সমাজের উৎসব।
পয়লা ফাল্গুনের মেলা: বসন্তের রঙে প্রাণোচ্ছল আয়োজন।
জব্বারের বলীখেলা: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুস্তি কেন্দ্রিক লোকজ মহোৎসব।

জব্বারের বলীখেলা: চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কুস্তি কেন্দ্রিক লোকজ মহোৎসব ┃ ছবি: সংগৃহীত
এই মেলাগুলো সাধারণত বসে গ্রামীণ খোলা মাঠে বা কয়েকটি গ্রামের সংযোগস্থলে। বাঁশ-খড়ের স্টল, কাগজ-ফানুসের আলো, আর মাটির গন্ধ মিলে তৈরি করে অনন্য পরিবেশ। লোকসংগীতের সুর ভেসে আসে একপাশ থেকে, অন্যপাশে জমে ওঠে গানের আসর।

বাংলার গ্রামীণ মেলা ও লোকজ উৎসব কেবল আনন্দ নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের ধারক ┃ ছবি: সংগৃহীত
বাংলার গ্রামীণ মেলা ও লোকজ উৎসব কেবল আনন্দ নয়, বরং আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়ের ধারক। এটি সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় করে, লোকজ বিনোদনকে টিকিয়ে রাখে এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে। আধুনিকতার ভিড়েও এই উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়—গ্রামের প্রাণ এখনো বেঁচে আছে মাটির গন্ধে, হস্তশিল্পে, আর লোকগানের সুরে।
আরো পড়ুন : একঘেয়ে আনন্দ নয়, চাই বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা